শিশুর অভিভাবকত্ব: একাল-সেকাল

বাস্তবিক অর্থে, মায়ের পাশাপাশি বাবাও যখন শিশুর বেড়ে ওঠায় সমানভাবে অংশগ্রহণ করেন, শিশুর উপর সেটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পিডিয়াট্রিকস প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে যে শিশুর সার্বিক সুস্থতা, বৃদ্ধি ও বিকাশে বাবার নিয়মিত সঙ্গদানের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। শিশু লালনপালনে বাবারা ‘অতিরিক্ত’ কেউ নন। মায়েরা যা যা দায়িত্ব পালন করেন, বাবাদেরও সেই দায়িত্বগুলো পালন করা জরুরি। এই গবেষণাটিতে আরো উঠে এসেছে যে, সন্তানের সাথে বাবাদের খেলার ধরণও ভিন্ন। শিশুরা বাবাদের কাছ থেকে নতুন কিছু করার, শেখার এবং ঝুঁকি নেবার অনুপ্রেরণা পায়। অপরদিকে, মায়েদের কাছ থেকে তারা স্থিরতা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয় শিখতে পারে। শিশুর জীবনে এই দু’টোরই প্রয়োজন রয়েছে। মন্টানা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়েছে যে পরিবারে বাবার সম্পৃক্ততা সন্তানের বিকাশে অনবদ্য ভূমিকা রাখে। বিশেষত সন্তানের বুদ্ধির বিকাশ, নারী–পুরুষ ধারণা তৈরি, মানসিকতা এবং আচরণে বাবার বিশেষ প্রভাব থাকে।

শিশুরা বাবাদের কাছ থেকে নতুন কিছু করার, শেখার এবং ঝুঁকি নেবার অনুপ্রেরণা পায়। 

পূর্বে বাংলাদেশে যৌথ পরিবার ব্যবস্থাই বেশি ছিলো। যেকারণে বাবা–মায়ের পাশাপাশি শিশুর দেখভালের জন্য আরো অনেকেই থাকতো। ধীরে ধীরে পুঁজিবাদী ও প্রতিযোগিতাশীল আর্থসামাজিক কাঠামো যৌথ পরিবারকে ভেঙে একক পরিবারের সংখ্যাকে দিনকে দিন বাড়িয়ে তুলছে। এর ফলে সন্তানের সাথে আগে যেভাবে বাবা–মায়েরা সময় কাটাতে পারতেন, সেভাবে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না। প্রায়শই দেখা যায় যে কর্মজীবী বাবা–মা সন্তানের সাথে পুরোটা দিন সময় কাটাতে পারছেন না বলে নিজেদেরকে অপরাধী ভাবছেন! তাই এমন পরিস্থিতিতে, গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা শিশুর সাথে ‘কোয়ালিটি টাইম‘ অর্থাৎ মানসম্পন্ন সময় কাটানোর উপর জোর দিচ্ছেন যা সন্তানের সাথে বাবা–মায়ের বন্ধনের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

শিশুটি কি বলতে চায় সেটা আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন মনে হলেও মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। এতে বাবা–মায়ের উপর শিশুর আস্থা তৈরী হয় ও শিশুর মনে নিরাপত্তার অনুভূতি জন্ম দেয়। 

এখন প্রশ্ন থেকে যায় যে যেসব পরিবারে শুধু বাবা কর্মজীবী, সেক্ষেত্রে কি সব দায়িত্ব মায়ের একার হবে? পুঁজিবাদের বিকাশের পর বাইরের উৎপাদনের বা কাজের জগৎ মুদ্রায়িত (monetized) হলেও গৃহস্থালি বা বাড়ির ভেতরের কাজগুলো কখনোই মুদ্রায়িত হয়নি। বরং অনেকাংশে এটা অবমূল্যায়িত হয়েছে। ফলে এর প্রভাবে আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারী ও পুরুষ সম্পর্কিত ধারণা এবং নারী ও পুরুষের ক্ষমতা পরিবর্তিত হয়েছে। তাই আমরা এটা ধরেই নিই যে মা তো গৃহিনী, শিশুর লালন–পালন আর পরিচর্যা তাই শুধু মাকেই করতে হবে!

শিশুকে নিরাপদে ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরী করে দেওয়াটা কারো একক দায়িত্ব না। ব্র্যাক আইইডি ও ফ্রেমওয়ার্কস ইনস্টিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে শিশুকে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করার দায়িত্বটি আসলে পরিবার ও সমাজ সকলেরই। 

Share:

On Key

Related Posts

Short Courses Launching Event On Muktopath

The launch of a couple of online short courses named ” ‘খেলা, আনন্দ ও শিখনে শিক্ষকের ভূমিকা and ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্ক ও আবেগ ব্যবস্থাপনা on the

A Workshop in
Sierra Leone

The visit was part of a collaboration between BRAC IED (BRAC Institute of Educational Development) and the Ministry of Basic and Senior Secondary Education (MBSSE)